1. admin@dainiktrinamoolsangbad.com : admin :
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নলছিটিতে জমজমাট কোচিং বাণিজ্য! হিজলায় ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি হিজলায় কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও পুরস্কার বিতরণ। ভারসম্যহীন নারীর নবজাতক শিশুটি”এখন ছোটমণি নিবাসে! কাঠালিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পল্লী বিদ্যুতের দুই কর্মীর মৃত্যু  পিরোজপুরের ১ ও ২ নির্বাচনী আসন নিয়ে হাইকোর্টের রুল! বর্ণাঢ্য আয়োজনে হিজলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত বাস দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের লোমহর্ষক বর্ণনা! বজ্রপাতে মেঘনা নদীতে পড়ে ছেলে নিখোঁজ” বাবা আহত! নেছারাবাদ গুয়ারেখা ইউপি উপনির্বাচনে “নৌকা পেলেন ফারজানা আক্তার!

বাস দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের লোমহর্ষক বর্ণনা!

এইচ এম জুয়েল
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩
  • ২১৭ বার পঠিত

বাস দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের লোমহর্ষক বর্ণনা!

এইচ, এম জুয়েলঃ-
ঝালকাঠিতে মর্মান্তিক বাস দূর্ঘটনায় মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের লোমহর্ষকর বর্ননা।

ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা বাস দূঘর্টনা থেকে বেচে আসা ৮ বছরের আহত যাত্রী মাহাদি জানান, আমার বাবা তারেক হোসেন পানির ডুবে থাকা বাসটির মধ্যে আমাকে নিয়ে হাবুডুবু খাওয়ার এক পর্যায়ে গ্লাস ভেঙ্গে আমাকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়ে নিজে আর বের হতে পারেনি, আমাকে বাচাতে গিয়ে বাবা আর বাচতে পারলেন না। আমি এখন এতিম হয়ে গেছি। মৃর্ত্যূর মুখ থেকে ফিরে আসা আরেক যাত্রী রাসেল মোল্লা জানান আমিও আহত অবস্থায় ফিরে আসলেও ঐ দূর্ঘটনায় আমার বাবা ও বড় ভাইকে চোখের সামনে হারিয়েছি, বাঁচাতে পারলাম না আমি অভাগা মা ও সন্তান সম্ভাবনা বড় ভাবিকে কি দিয়ে শান্তনা দিবো, ভাষা খুজে পাচ্ছি না। তেলিখালী গ্রামের প্রবাসী রাসেল মিয়া ঐ বাস দূঘর্টনা থেকে আহত অবস্থায় কোন মতে ফিরে আসলেও তার প্রিয়তমা স্ত্রী সাদিয়াকে হারিয়ে পাগল প্রায়।

দায়ী করছে বাস চালকের খামখেয়ালিপনাকে!!

ভান্ডারিয়ার ধাওয়ার বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী আয়শা ছিদিক্কা, দুই ছেলে হাফিজুর রহমান ও হাবীবুর রহমানকে নিয়ে তারা ঐ বাসে বরিশাল যাচ্ছিলেন । এ বাস দূর্ঘটনায় আহত অবস্থায় সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যূর দুয়ার থেকে তারা তিন জনই ফিরে আসলেও ভীবৎস সেই ভয়াল স্মৃত্মি মনে করে হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে তৃণমূল সংবাদকে জানান, পানিতে ডুবন্ত বাসের গোলা পানির মধ্যে বের হওয়ার কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করে দেখি ছেলে দুটি পানির মধ্যে ছটপট করতেছিল। তাদেরকে জাপটে ধরে ডুবন্ত বাসের এক কিনারে চলে যাই। উল্টো বাসের পাদানির দিকে ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে যখন আলোর মুখ দেখি তখনঐ ছিদ্রগুলোর মুখে গিয়ে ভাসা অবস্থায় একটু শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করি সন্তান দুটিসহ। ওদিকে বেচে থাকার সর্বশেষ চেষ্টা চালাই বাচার আশায় তখন কারা যেন নীচ থেকে আমাদের পা ধরে টানতে ছিল। ছেলেরা চিৎকার করে বলে, মা কে যেন আমার পা ধরে টানে, আমি তো আর পারতেছি না। আমি তো মারা যাব। তখন মা (আমি) বলি বাবা শক্ত করে আমাকে ধর। এদিকে আমার একটা হাত বসার ছিটের কোন এক ফাকে আটকে গেলে আমি আরো অসহায় পড়ি এবং আল্লাহকে ডাকতে থাকি। এরই মধ্যে বাসটি আস্তে আস্তে হালকা হয়ে ভেসে উঠলে আমাদের শ্বাস নিতে একটু সহজ হয়। কিছক্ষন পর উদ্ধার কর্মীরা আমদের উদ্ধার করে পুকুরের কুলে নিয়ে আসে। আল্লাহ আমাদের বাচিয়ে রাখলেও যারা আমাদের পা টেনে ধরেছিল তারা আদৌ বেচে আছে কিনা আমি যানি না। এই দূর্বিষহ স্মৃতি মনে পড়লে আমি বিমর্ষ হয়ে পড়ি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মল্লিক নামের আহত এক যাত্রী সেই দিনের বিভৎস ঘটনার বর্ননা করেন ভান্ডারিয়া থেকে গত শনিবার ২২ জুলাই সকালে বরিশালের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়ার পর পথিমধ্যে ড্রাইভারের নির্দেশে সুপারভাইজার আরো অতিরিক্ত যাত্রি ছাদে তোলেন এবং রাজাপুর ষ্টেশনে গাড়ীতে আবারও যাত্রী তুলে ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিন বক্সের উপর একাধিক মহিলা যাত্রী বসালে তাদের বসতে অসুবিধা হওয়ার এক পর্যায়ে মহিলা যাত্রীদের সাথে তর্কে জড়িয়ে যান ড্রাইভার । যাত্রীদের হুমকি দিয়ে উরাদুরা গাড়ী চালাতে থাকেন। কিছুক্ষন পর মুহুর্তের মধ্যেই বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রায় ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ছত্রকান্দা নামক স্থানের একটি পুকুরের মধ্যে উল্টে পড়ে গেলে ড্রাইভার জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলেও আমি সহ অধিকাংশ যাত্রী পানিতে নিমজ্জিত বাসের মধ্যে আটকে পড়ি। জানালার গ্লাস কোনভাবে ভাঙ্গতে পারছিলাম না। চোখের সামনে নারী শিশুদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখে আমিও মনে মনে ভাবি এ বুুজি আমারও প্রাণ পাখিট উড়ে যাচ্ছে। তখন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকি এবং নাবালিকা সন্তান ও পরিবারের কথা মনে করে ভাসমান অবস্থায় বেচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। হঠাৎ করে ভাঙ্গা গ্লাসের একটু ফাকা জায়গা দিয়ে নাক বের করে ধম নিতে থাকি। এরই মধ্যেই দুই তরুন যাত্রী যার মধ্যে একজন আমার ছাত্র ছিল তার গ্লাস ভেঙ্গে বের হয়ে অনেক কষ্ট করে বাসের গ্লাস ভেঙ্গে আমাকে টেনে বের করেন। এরই মধ্যে স্থানীয়রা উদ্ধার করার আগেই ঝড়ে যায় নারী শিশুসহ ১৭টি তাজা প্রান। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকুরিয়া আল্লাহ আমাকে পূনঃজীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।

এ রকম বিভৎস ঘটনার বর্ননা দিলেন মৃত্যূর হাত থেকে আহত অবস্থায় ফিরে আসা যাত্রী ফজিলা আক্তার, হাসিনা বেগম, মেহেদি হাসান সহ আরো অনেকে। কলেজ পড়–য়া মেহেদি বলেন, বরিশালের এক বন্ধুকে রক্ত দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঐ বাসের যাত্রী হয়েছিলাম। পথিমধ্যে বাস দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ডুবে যাওয়া বাস থেকে ডুবন্ত অবস্থায় অনেক কষ্ট করে গ্লাস ভেঙ্গে বের হয়ে নিজেই ক্লান্ত শরীরে মনে পড়ল বাসের ভিতরে আমার একজন শিক্ষক আটকে আছে। মুহূর্তের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে আমার শিক্ষকসহ এক নারীকে উদ্ধার করি এবং একটু বিশ্রাম নিয়ে দুই গুরুতর আহত যাত্রীকে নিয়ে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে বন্দুকে রক্ত দিয়ে বাড়ীতে আসার পথে দেখি ঘটনাস্থলে তাকিয়ে নিথর দেহে পড়ে আছে সারি সারি লাশ। ভাবতেও পারিনি আমি যেই বাসের যাত্রী ছিলাম সেই বাসের এত যাত্রীরা লাশ হবে।

এদিকে ঝালকাঠী জেলা প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগকৃত ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তদন্ত কার্যক্রম অব্যহত আছে। পুলিশ বাদী হয়ে বাসের চালক মোহন খানম, সুপারভাইজার মো. ফয়সাল ও হেলপার আকাশ এই ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ঝালকাঠী সদর থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুনকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়।এরই মধ্যে বাসের ড্রাইভার মোহন খান ও সুপারভাইজার মো. ফয়সালকে আটক করেছে -RAB!

উক্ত বাস দূর্ঘটনায় ১৭জন নিহত হলেও তার মধ্যে ৮ জনের বাড়ী পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়। এরা হচ্ছেন দক্ষিণ ভান্ডারিয়ার পান্না বেপারীর ছেলে তারেক বেপারী (৪২), উত্তরপূর্ব ভান্ডারিয়া মহল্লার পিতা ও পুত্র ছালাম মোল্লা (৬৫) ও তার ছেলে শাহীন মোল্লা(২৫), পশারী বুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া (৬), পূর্ব ধাওয়া (পোদ্দারখাল) মা রহিমা বেগম (৭০) ও ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার (৫০) , উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭৫) ও তেলিখালী গ্রামের রাসেল সিকদারের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)। এরা সকলেই বরিশালেচিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। নিহত অন্যরা হচ্ছে রাজাপুরের খাদিজা বেগম (৪৩), খুশবু আক্তার (১৭),মো. নয়ন (১৬) বাকেরগঞ্জের আব্দুল্লাহ (৮), মেহেন্দিগঞ্জের মা আইরিন আক্তার ও মেয়ে রিপামনি(২),কাঠালিয়ার সালমা আক্তার মিতা (৪২) । অজ্ঞাত আরো দুই জন।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের দাবী অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে বাসটি চালানোর জন্য বাশার স্মৃতি নামক বাসের মালিক ঝালকাঠির আবুল কালাম আকনকে আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরন প্রদানে বাধ্য করে ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজারকে সর্বোচ্চ সাজা ফাসিতে দন্ডিত করা হোক।

এ জাতীয় আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২০ দৈনিক তৃণমূল সংবাদ
Theme Customized BY Theme Park BD