বাগেরহাট প্রতিনিধি : ভোগান্তি ও অনৈতিক অর্থ অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্তমান সরকার সময়ে বাগেরহাট জেলা শহরে চালু হওয়া পাসপোর্ট অফিস এখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট আবেদনকারীরা প্রতিদিনই হয়রানী আর অনৈতিক অর্থ অপচয়ের স্বীকার হচ্ছে। প্রভাবশালী উপ সহকারী পরিচালক (ডিএডি) এসএমএ সানি প্রভাব দেখিয়ে এবং বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের মো. জামির হোসেন নামের একজন অফিস সহকারী চিহ্নিত দালাল চক্রকে কাজে লাগিয়ে প্রতি সপ্তাহে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ওই অফিস সূত্রে প্রচার পেয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার এমআরপি পাসপোর্ট জমা নিয়ে নতুন ফাইল প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানের উপ-সহকারী পরিচালক জাহিদ ইকবাল অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজশাহী অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক এসএমএ সানিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বাগেরহাট অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় ২ মাস পরে স্থায়ীভাবে দায়িত্ব নিয়ে নেন। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করাকালে প্রথম দিকে কিছু ফাইল যথা সময়ে কাজ হলেও এখন টাকা ছাড়াই পাসপোর্ট পাওয়া যেন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। লাইনে টাকা ছাড়া চলছে না কোন ইনরোলমেন্ট। লাইন থাকলে হচ্ছে ইনরোলমেন্ট। আর টাকা না দিলে হচ্ছেই না ইনরোলমেন্ট। ফলে যথা সময়ে পাসপোর্ট পেতে হিমশিম খাচ্ছে সেবা গ্রহীতারা।
বাগেরহাট জেলা পাসপোর্ট অফিস এলাকায় সরেজমিনে কয়েকদিন ধরে অবস্থান নিয়ে জানা গেছে, চিতলমারী উপজেলার নিতীশ, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বীরেন্দ্রনাথ, মোখছেদুর ও আবু জাফরসহ ১০/১২ জন নির্ধারিত দালালের মাধ্যমে অফিস সময়ের আগে ও পরে একসঙ্গে অফিস সহকারীর কাছে পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা দেন। দালালদের মাধ্যমে আবেদন ফরম জমাদানকারীর ফরম পূরণে কোন ভুল হয় না এবং যথাসময়ে ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্টের কাজ সম্পন্ন হয়।
অপরদিকে, স্বাভাবিকভাবে অন লাইন ফরম পূরণ করে নিয়ম মাফিক জমা দিতে গেলে ওই অফিস সহকারী নানা ভুল ধরে পুনরায় আবেদন করার জন্য বলেন এবং নানা অজুহাতে ভোগান্তিতে ফেলেন। এতে করে জেলা সদর বাদে বাইরের উপজেলার আবেদনকারীরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে সমস্যায় ফেলে বাগেরহাটের বাসিন্দা ওই অফিস সহকারী দালালদের মাধ্যমে আবেদনকারীদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত রবিবার সকালে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বীরেন্দ্র নাথ নামের একজন দালাল এলাকার জ্যোৎস্না ও সরোয়ার নামের দু’জন পাসপোর্ট আবেদনকারী অনলাইন ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসের সাগর রহমান নামের একজন আনসার সদস্যের মাধ্যমে জমা দিলে তাৎক্ষনিক কাজটা হয়ে যায়।
বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের দালালদের একটি সূত্র জানায়, পাসপোর্ট আবেদন প্রতি অফিস সহকারীর কাছে নির্ধারিত ১১০০ টাকা অনৈতিকভাবে দিতে হয়। মাত্র দুই মাস বারো দিনে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে দালারদের মাধ্যেমে অবৈধভাবে এমআরপি পাসপোর্ট জমা নিয়ে শুধু দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিএডি সানি ও অফিস সহকারি জামির। যেখানে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ২০ বছরের উপরে ই-পাসপোট জমা হয় না। সেখানে বয়স ৬০/৭০ বছর হলেও সমস্যা নেই জন্ম নিবন্ধন দিয়ে। জমা দিতে দেশের যে কোন জেলার হলেই হবে, শুধু লাগবে ফাইল প্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন জেলার এমআরপি বই জমা নিয়েছে। ময়মনসিংহ-১১৬৩৫৪, মাগুরা-১১৬৩৫৩, সুনামগঞ্জ-১১৬৩৬৫, পিরোজপুর-১১৬৭০, সিলেট-১১৬৩৭৮/১১৬৩৮৯, পটুয়াখালী-১১৬৩৪২, শেয়ারপুর-১১৬৩৮৫, ঢাকা-১১৬৩৮৯/১১৬৩৯১, মুন্সিগঞ্জ-১১৬৩৯০ সহ বিভিন্ন জেলার কয়েক’শ এমআরপি বই জমা নিয়ে নতুন করে পাসপোর্ট তৈরী করে দিয়েছে ডিএডি সানি। মাত্র দুই মাস ১২ দিনে শুধু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমআরপি ৩৫০টি ফাইল জমা করা হয়েছে। এ সময়ে ডিএডি সানি প্রতি ফাইলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সময়ে ই-পাসপোর্ট জমা হয়েছে ৪ হাজারের বেশী। ই-পাসপোর্ট করার জন্য বই প্রতি আদায় করা হয়েছে অতিরিক্ত ১১০০ টাকা।
পাসপোর্ট ফরম জমা নেয় স্বপন। সে খুব দক্ষ ভুল ধরায়, তাই জমা দেওয়া ফরম ভুল ধরে কয়েক বার ফেরত দিলে তখন এমনিতেই দালালের মাধ্যমে চ্যানেল লাইনে চলে যেতে হয়। তখনই আবেদনকারীকে গুণতে হয় ঘুষের জন্য অতরিক্ত ১১০০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য ভাবেও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। সব মিলিয়ে একজন সাধারণ পাসপোর্ট আবেদনকারীকে একটি পাসপোর্ট করতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ধনি শ্রেণীর মানুষরা দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট নিলেও চরম বিপদে পড়ে দরিদ্র মানুষরা। সরকারি পাসপোর্ট করতে গিয়ে অনেক সময় চিকিৎসার টাকা ঘাটতি পড়ে যায় বলেও অনেকে অভিযোগ তুলেছেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে বাগেরহাট পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি এসএমএ সানিকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করেন নি।