মিজানুর রহমান আকন: সিলেটের প্রকৃতিকন্যা খ্যাত জাফলং যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তেমনি এখানে রয়েছে খনিজসম্পদ পাথরেরও ভাণ্ডার। সেই পাথর কেটে রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুঁড়া করার জন্য অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কারিগররা তৈরি করছেন ‘শিল-পাটা’। কিন্তু আগের মত এই শিল্পের জৌলুস নেই। দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাদের বাপ-দাদার পেশাটি টিকিয়ে রাখা কঠিন।
একসময় দেশের প্রত্যেকটি পরিবারে এ শিলপাটার ব্যবহার ছিল ব্যাপকভাবে; কিন্তু কালের বিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে ক্রমেই মানুষ হয়ে উঠেছে যন্ত্রমুখী। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিলপাটার ব্যবহার। এ যুগে বিভিন্ন মেশিনের সাহায্যে সব ধরনের মসলা ভাঙানো বা গুঁড়া করার ফলে শিল-পাটার ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া শিল-পাটার ব্যবহার এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে মেশিন দিয়ে ভাঙানো পণ্যের চেয়ে পাটা দিয়ে তৈরি মসলার খাবার অনেক সুস্বাদু বলে অনেকেই মনে করেন।
শিলপাটা তৈরিতে সিলেট অঞ্চলের রয়েছে খ্যাতি। এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট জনৈক কারিগরের সাথে আলোচনা করে জানা যায় সিলেটের জাফলং, জৈন্তার পাটা শুধু দেশে নয় বিদেশেও সমাদৃত। জাফলং পাথরের জন্য বিখ্যাত। বিশাল পাথর কেটে শিলনোড়া তৈরির একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় সেখানে গড়ে উঠেছে। ছোট বড় সাইজের পাটা তৈরির কলাকৌশল আছে। উন্নতমানের পাথর ও কারিগরদের দক্ষতায় এখানে যে পাটা তৈরি হয় তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাক,নৌকায় চালান হয়। নিম্নমানের পাথর হলে পাটায় মশলা পিষতে বালি উঠে যায়। জৈন্তার পাটায় এটি হয় না। ওজন বেশি হওয়াতে পরিবহন কষ্টকর। তবুও সিলেটের পাটা ব্রিটেন পর্যন্ত চলে গেছে। সিমেন্ট দিয়েও শিলনোড়া তৈরি হয় যা ওজনে হালকা। তবুও গৃহিণীরা তা পছন্দ করেন না। পাটা কিনে প্রথমে এমনিতে ঘষাঘষি করে ব্যবহার উপযোগী করতে হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে পাটা ভোতা হলে তা ধার বা শান দেয়ার কাজ এক শ্রেণীর লোকের পেশা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে এরা “এই-পাটা-ধার করাইবেন” বলে হাঁক দেয়। এখন এদের সংখ্যাও কমে আসছে।
সাধারণত পাথরের তৈরি শিল এবং নোড়া’র ঘর্ষণে মসলা হতো মিহি আর চমৎকার স্বাদপূর্ণ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে অকৃত্রিমতা এবং ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা আবেগ। ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে না যাক বরং সময়োপযোগী পন্থায় বেঁচে থাকুক এই কামনায় আজ এই পর্যন্তই। তবে এই শিল্পকে ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এই অপরূপ সুন্দর্য সিলেটের জাফলংয়ে ঘুরতে আসেন।
জাফলংয়ে যেতে হলে ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমানে সিলেটে এসে সড়কপথে জাফলংয়ে যেতে হয়। ওখানে পর্যটকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।