গ্রামীণ জনপদে”ম্যাজিস্ট্রেট-সেনাবাহিনী” লকডাউন সফল করতে জরিমানা আদায়!
এইচ এম জুয়েল:- শুক্রবার ছুটির দিনে গ্রামীণ হাট বাজার গুলোতে গত কয়েক দিনের তুলনায় মানুষের আনাগোনা একটু বেশি। রাস্তায় লোকাল গাড়ি কম দেখা গেলেও তবে অটোরিকশা অন্য দিনের মতই। বাজারে সকালে দিকে মানুষের ভিড় দেখে ছুটে আসে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর, উপস্থিত জনতাকে বিভিন্ন ধারায় অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এবং সেখানে হ্যান্ডমাইকে জনতার উদ্দেশ্যে বলছিল” আপনারা বাজারে ভিড় করবেন না। দেশে পরিস্থিতি ভালো নয় করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দ্রুত বাজার শেষ করে চলে যান, সকলে মুখে মাস্ক পড়ুন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন ।
তবে বাজারে খাবারের দোকান ও সবজির ভ্যানগুলোতে মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের তুলনায় ভিড় ছিল কম। এদিকে লকডাউনে যেসব দোকান বন্ধ থাকার কথা, সেখানে অনেক অংশে শাটার নিম্ন করে পাহারাদার বসিয়ে সেগুলো খুলে রাখতে দেখা গেছে। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, কসমেটিক, ক্রোকারিজ প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দোকান, লাইব্রেরি, জুতার দোকান, ফ্যাশন হাউজ টেইলার্স সহ অন্যান্য দোকান গুলো খোলা ছিল। জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে প্রশাসন বিভিন্ন হাট-বাজারে দোকানপাট বন্ধ করে জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার ব্যবসায়ী বলেন, “দোকান খোলা না রাখলে কী কাজ করব? বাসায় বসে থাকলে খাবার তো কেউ দিয়ে যাবে না। দোকান খোলা থাকলে কাজও হবে, ইনকামও হবে। আমরা খেয়াল রাখি, পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পেলে শাটার বন্ধ করে দেই। তাছাড়া আর কী করব, বলেন।
এদিকে বরিশাল বিভাগ করোনা সংক্রমণ তুলনামূলক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পার্শ্ববর্তী খুলনা ও ঢাকা বিভাগ করোনার ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওই বিভাগগুলোর সীমান্তবর্তী পিরোজপুর জেলাকে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেশের চলমান লকডাউন, তিনি নিজে সহ একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সফল করার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন ধারায় আম জনতাকে অর্থদন্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখছেন। আজ নবম দিনে জেলায় ১৪ জনকে ৫৯৫০টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। শুক্রবার সকালে ভান্ডারিয়া উপজেলার পৈকখালী বাজারে কসমেটিকস দোকান খোলা রাখার দায়ে রুবেল মীর কে অর্থদন্ড দেন ভান্ডারিয়ার এসিল্যান্ড তৌহিদুল ইসলাম।
করোনায় সংক্রমণে দেশে একদিনে (২৪ ঘণ্টায়) এযাবত সর্বোচ্চ ২১২ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট ১৬ হাজার ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২১২ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগেরই ৭৯ জন। এছাড়া ঢাকায় ৫৩, চট্টগ্রামে ২৬, রাজশাহীতে ২৩, বরিশালে ৫, সিলেটে ৬, রংপুরে ১২ এবং ময়মনসিংহে ৮ জন মারা গেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) করোনায় দেশে ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়। তার আগের দিন বুধবার (৭ জুলাই) প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। এছাড়া গত সপ্তাহের সোমবার (৫ জুলাই) ১৬৪ ও মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ১৬৩ জন মারা যান। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ১৩০ জনের বেশি মানুষ। কর্মহীন মানুষকে ঘরে রাখতে তাদেরকে সেনাবাহিনী দিচ্ছে খাদ্য সহায়তা। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১১৯ জন পুরুষ এবং ৯৩ জন নারী। এদের মধ্যে ১৬ জন বাসায় মারা গেছেন। বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ১৬ হাজার ৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ২৫৪ জন এবং নারী ৪ হাজার ৭৫০ জন। এবং বিশ্বব্যাপী ৪০ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত মারাা গেছেে।
শুক্রবার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনা-বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।