৫২টি প্রাণ নরককুন্ডে অঙ্গার হাওয়ায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের রিমান্ড
এইচ এম জুয়েল :-আজ আদালত চেয়ারম্যানসহ ৮ জনকে ৪দিনের রিমান্ড দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেমসহ ৮ জনেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খানম আসামিদের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মামলার বাদী হয়েছেন রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নাজির উদ্দিন মজুমদার ৩০২ ধারায় মামলাা করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫/২০ জনকে।
শনিবার (১০ জুলাই) কারখানাটি পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মন্ত্রীর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন মামলা তো হয়েই গেছে, তদন্ত শেষে এর সঙ্গে সামান্যতম দোষীদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। সারাদেশ এ ঘটনায় স্তব্ধ। একসঙ্গে এতজনের প্রাণহানি খুবই দুঃখজনক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন গ্রেপ্তারকৃত আটজনের মধ্যে সজীব গ্রুপের এমডি-সিইও ছাড়াও রয়েছেন আবুল হাসেমের চার ছেলে (গ্রুপের ডিএমডি) হাসিব বিন হাসেম ওরফে সজীব, (পরিচালক) তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম; হাসেম ফুডসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদ এবং সিভিল ইঞ্জনিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন। এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর পর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।
লাশগুলো ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া তাদের পরিচয় জানারও উপায় নেই। ফলে স্বজন হারানো মানুষগুলোকে লাশ বুঝে পেতেও আরও সপ্তাহ তিনেক অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য:-বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন একটা বিল্ডিং নিয়ন্ত্রণে এত বেগ পেতে হয়, তাহলে দেশে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে কি পরিস্থিতি হতে পারে সরকারের ভেবে দেখা উচিত। কদিন আগেই মগবাজারে এক বিস্ফোরণে কয়েকজনের প্রাণ গেল। একইভাবে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে তাজরীন ফ্যাশন, রানা প্লাজা, নিমতলী, চুড়িহাট্টা, ধোলাইপাড়়, নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন নজায়গায়। প্রতিবার প্রাণহানির পর বেরিয়ে আসে হাজারো অনিয়ম অবহেলার কথা। কিন্তু স্বজনহারা মানুষের বুক ফাটা কান্না ফিরে ফিরে আসে। কল কারখানা অধিদপ্তরের পরিদর্শক কর্মকর্তারা বছরের পর বছর অফিসেই সময় পার করে দেন।সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম অবশ্য অভিযোগ স্বীকার করতে চান না। মৃত্যুর দায়ও তিনি নিতে রাজি নন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন এটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা “এই কারখানা কম্পাউন্ডে আমরা ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে দুই হাজারের বেশি শ্রমিকের সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। নিয়ম কানুন মেনেই আমরা ব্যবসা করছি সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যান দিচ্ছি, জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু শেষ জীবনে এসে বড় পরীক্ষার মুখে ফেলে দিল এই অগ্নিকাণ্ড।”
প্রশাসনিক কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিনের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কারখানায় যখন আগুনের সূত্রপাত হলো, বিভিন্ন সেকশনে তখন ১৮০ থেকে ১৯০ জনের মতো কাজ করছিলেন। ওই কারখানায় তৈরি হতো সেজান জুস, নসিলা, ট্যাং, কুলসন ম্যাকারনি, বোর্নভিটার মত জনপ্রিয় সব খাদ্যপণ্য, সারা দেশের মানুষ যা চেনে, শিশুরা পছন্দ করে খায়।
অগ্নিকাণ্ডের পর স্বজনদের কথায় জানা গেল, বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির অনুমোদন নিয়ে তাদের ব্র্যান্ড নেইম ব্যবহার করে এসব পণ্য তৈরির কাজে শিশু শ্রমিকদেরও ব্যবহার করা হতো। তারা আরো বলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা একটি ভবনের আগুন নিভাতে ২৫ ঘন্টা কি লাগে তাদের বিরুদ্ধে উদ্ধারকাজের অবহেলার অভিযোগ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানালেন, ৩৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা ওই কারখানা ভবনে রাস্তাঘাট ভালো না ভবনের ভিতরে গোডাউনে ভরা অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তারা দেখেননি; জরুরি বের হওয়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যক পথও সেখানে ছিল না।