মেসির হাসির দিনে কাঁদলেন বন্ধু নেইমার! ১ গোলে শিরোপা জয়!
এইচ এম জুয়েল:-পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর,এটা অন্তত আজকের দিনের জন্য সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা ফুটব মাঠে। একদিকে যখন স্বপ্নপূণের উল্লাস। আরেকদিকে তখন হতাশায় ঘিরে থাকা মুহূর্ত।
আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কী বলছি? লিওনেল মেসি যখন ট্রফি হাতে নেওয়ার অপেক্ষায় উল্লাসে ব্যস্ত। তখন কাঁদছেন নেইমার। তার চোখের কোনায় জল। একটা শিরোপা জয়ের স্বপ্ন তিনিও দেখতেন । মরিয়া ছিলেন কোপা আমেরিকার ট্রফিটা জিতে নিজের হাতে নিতে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সেটা ধরে রাখতে পারলেন না।
২০১৪ এই মারাকানাতেই মেসির চোখের পানি মিশে গিয়েছিল ঘাসের সঙ্গে। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে গিয়েছিলেন, কিন্তু ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। লিওনেল মেসি ব্যর্থ হয়েছেন চারটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের। দীর্ঘদিনের পর অবশেষে সাফল্যের নব ধারায় সিক্ত হলেন আর্জেন্টিনা। এবার ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা এখন ঘরে নিলেন আর্জেন্টিনার। ২১তম মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার দুর্দান্ত এক গোলে নিশ্চিত হলো জয়। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম কোনো শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন মেসি।
২০০৭ সালেও মেসি খেলেছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনাল। সেবার ব্রাজিলের কাছে হেরেছিলেন ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫, ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি।
অবশেষে ১৪ বছর পর কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়ে আর বঞ্চিত থাকতে হয়নি মেসিকে। চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিজয়য়ী দলের অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা হাতে তুলে নিতে পারলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। আর এদিকে ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মেসি করেছেন ৪ গোল ও ৫ এসিস্ট। আসরে সর্বোচ্চ গোল ও সর্বোচ্চ এসিস্ট- দুটিই মেসির। যার সুবাদে এবারের কোপার গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল- উভয়ই গেল মেসির হাতে।
মেসির স্ত্রী আন্তেল্লো রোকুজ্জে ফেসবুকে লিখছেন!
তোমার লালিত স্বপ্ন আজ পুরোন হলো।ভালোবাসার আর্জেন্টিনা এগিয়ে যাও। তুমি শিরোপা জেতার যোগ্য দাবিদার। সত্যিই তোমাকে নিয়ে একসঙ্গে বিজয় উদযাপনের জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’
আমার চেষ্টায় কোন ত্রুটি ছিলো না -কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি”!
দীর্ঘ খরা কাটানো এক শিরোপা। কোপা আমেরিকা শিরোপা। এ কাজটা করতে পারেননি মার্সেলো বিয়েলসা, হোসে প্যাকারম্যান, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আলেহান্দ্রো সাবেয়া কিংবা টাটা মার্টিনোদের মতো কোচের।
পেলে–ম্যারাডোনা পারেননি, সেটা মেসি পারলেন” ২৮ বছরের প্রতীক্ষা শেষে আর্জেন্টিনা জিতল লাতিন আমেরিকান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের এই ট্রফি। আর মেসি ছাড়িয়ে গেলেন ইতিহাসের দুই সর্বকালের সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের পেলে আর নিজ দেশের ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে!
বিস্ময়কর হলেও সত্য বিশ্বের ইতিহাসে সেরা দুই ফুটবলার পেলে ও ম্যারাডোনা কোপার ট্রফিটা অপ্রাপ্তি। অনেকটা চাঁদের কলঙ্কের মতো। তারা জিততে পারেননি সেটা (৩৪ বয়সী) খুদে জাদুকর মেসির জীবনে ধরাদিলো।
আক্ষেপে ছিল মেসি জাতীয় দলের হয়ে কিছুই জিততে পারেন না। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। ফাইনালে উঠলেও সঙ্গী হয়েছে দ্বীর্ঘশ্বাস। বিশ্বের প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকায় ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি মেসির!
খেলা শুরু ব্রাজিলে ১০ জুলাই রাত ৯টায়। কিন্তু বাংলাদেশে(১১তাং)সকাল ৬টায়। বরাবরই বাংলাদেশ ফুটবল খেলার প্রতি বেশি এক্সাইটেড, তাই ফেসবুকে নিজ নিজ দলের স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে যায় আর্জেন্টিনার জার্সি পড়ে পতাকা হাতে নিয়ে মেসির ভক্তরা উল্লাসে মেতে উঠে। অনেক এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। টিভির সামনে দর্শকরা চিৎকার করে আনন্দে আত্মহারা ।
আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক। একটি শিরোপার জন্য কত আকুতি ছিল ম্যারাডোনার। কত আকাঙ্খা।খেলা হলেই ম্যারাডোনা ছুটে যেতেন মাঠে। দুই হাত উঁচিয়ে, বুকটা চিতিয়ে শিশুসূলভ উল্লাসে ফেটে পড়তেন। শেষ পর্যন্ত হতাশায় ডুবে মাঠ ছাড়তে হতো তাকে।
১৯৯৩ সালে পর কোনো বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলেন মেসিরা।কে জানে, হয়ত স্বর্গে বসেই তিনি উপভোগ করছেন মেসিদের সাফল্য।
ফুটবল বিশ্বকে কাঁদিয়ে গত বছর ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছরের ফুটবলের ঈশ্বর ম্যারাডোনা। না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন।
!!!কোপা আমেরিকার শুরুর ইতিহাস!!!
ইউরোপিয়ানদের হাত ধরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায়। ব্রিটিশ নাবিকরা অবসর সময়ে ফুটবল খেলত। এই ব্রিটিশরাই ১৮৬৭ সালে বুয়েনস আইরেস নামে প্রথম ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে আর্জেন্টিনাতে।
১৮৯৪ সালে চার্লস মিলার নামে একজন ব্রিটিশ ব্রাজিলের সাও পাওলোতে আসেন দুইটি ফুটবল নিয়ে। তিনি যখন তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মীদেরদের সাথে ফুটবল খেলতেন তা দেখে তখন ভাবলেন এই খেলা তো আমরাও খেলতে পারি। খেলা শুরুর, পরে ইংরেজদের চেয়ে ভালো খেলে রাতারাতি ফুটবল ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো ব্রাজিলে।
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, এবং উরুগুয়ে এই তিন দেশের ফুটবল খেলা দেখে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোও আস্তে আস্তে ফুটবলে আগ্রহী হয়ে উঠল। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯১৬ সালে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার ১০০ বছর উপলক্ষে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা আর চিলি এই চার দেশকে নিয়ে শুরু হয় কোপা আমেরিকা। তখন এই প্রতিযোগিতার নাম ছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ।প্রতি বছর এই খেলা হতো। মজার ব্যাপার হল কোপা আমেরিকা’র মতো ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপও ফুটবল শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার দেশে এবং দুইক্ষেত্রেই চ্যাম্পিয়ন দলের নাম উরুগুয়ে, রানার্সআপ দলের নাম আর্জেন্টিনা। তার পর থেকেই একটা রীতিতে বেধে ফেলা হয় প্রতি দুই বছর পর পর কোপা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদিও এই নিয়মের ব্যত্যয়ও হয়েছে বহুবার। পরে কোপা আমেরিকা ফুটবল খেলা চার বছরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।