তৃণমূল প্রতিনিধঃ কারারক্ষী চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে ভান্ডারিয়ার একাধিক লোকের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভান্ডারিয়ার উপজেলার মাহবুব হাওলাদার ও বরগুনা জেলার মনির হোসেনকে ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ আটক করে। এই প্রতারক চক্রের অপর সহযোগী আরিফুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ।
এই ব্যাপারে (৩০ জুলাই) শনিবার বেলা ১১ ঘটিকায় ভান্ডারিয়া থানা হলরুমে পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভান্ডারিয়ার-মঠবাড়িয়ার সার্কেল মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ভান্ডারিয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুমুর রহমান। এসময় পিরোজপুর জেলা ও ভান্ডারিয়া উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ২৫/৩০জন সংবাদ কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অপরাধ নিয়ে প্রশ্ন করেন মোহনা টিভি’র সাংবাদিক এইচ এম জুয়েল তার উত্তরে এসপি বলেন এরকম প্রতারণা চক্রদের প্রতি পুলিশের কঠোর নজরদারি আছে, ভবিষ্যতে কেউ অন্যায়-প্রতারণা করতে গেলে পুলিশের ফাঁদে পড়ে যাবে এবং পুলিশের অভিযান সর্বদাই অব্যাহত থাকবে।
প্রেস লিস্টের কপি তুলে ধরা হলোঃ-
ভান্ডারিয়া থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রার্থী ১। সিয়াম মিয়া, পিতা-মোঃ মানিক মিয়া, মাতা-খাদিজা খাতুন, গ্রাম-দক্ষিণ ভান্ডারিয়া, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর, ২। মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার, পিতা-আব্দুর রব হাওলাদার, মাতা-মিনারা বেগম, গ্রাম-নদমূলা, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুরদ্বয়ের ভিআর জেলা বিশেষ শাখা,পিরোজপুর মারফত ভান্ডারিয়া থানায় প্রাপ্ত হলে অফিসার ইনচার্জ, ভান্ডারিয়া থানা উক্ত ভিআর ০২ (দুই) টি সরেজমিনে অনুসন্ধানের জন্য ভান্ডারিয়া থানার এসআই/মোঃ আশিকুল ইসলাম ও এসআই/মোঃ ফারুক হোসেন বরাবর হাওলা করেন। হাওলাকৃত ভিআর ০২ (দুই) টি যথাযথভাবে অনুসন্ধান পূর্বক পুলিশ সুপার, পিরোজপুর বরাবর প্রেরণ করেন।পুলিশ সুপার,পিরোজপুর যথাযথ নিয়মে ভিআর দুটি সরকারি ডাকযোগে কারা অধিদপ্তরে প্রেরণ করলে; এ ধরণের কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি বলে কারা অধিদপ্তর পুলিশ সুপার, পিরোজপুর বরাবর মতামত দেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার, পিরোজপুর দায়-দায়িত্ব নিরুপন করে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মঠবাড়িয়া সার্কেল,মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। তিনি সার্বিক অনুসন্ধান ও প্রার্থীদ্বয়ের বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখতে পান যে, বিশাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণা পূর্বক টাকা ও চেক আত্নসাৎকারী প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার প্রার্থীদ্বয়কে জেল কারারক্ষী পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করেন এবং সে মোতাবেক কিছু টাকা গ্রহণ করেন। প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার মোঃ সিয়াম মিয়া ও তার বন্ধু মোঃ ইব্রাহীম দের সাথে ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা চুক্তিতে কারারক্ষী সিপাহী পদে চাকুরী দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর, সিয়াম মিয়ার পিতা মোঃ নজরুল ইসলাম মানিক মিয়া তার ছেলের ভবিষ্যতের দিকে তাকাইয়া বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের নিকট হইতে টাকা ধার এবং গাছপালা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করেন। ইংরেজী ১২/১২/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় মোঃ নজরুল ইসলাম এর দোকানে প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার আসলে মোঃ নজরুল ইসলাম সরল মনে ২,৫০,০০০/- (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা দিলে প্রতারক মাহাবুব নিজ হাতে তা গ্রহণ করেন। অবশিষ্ট ৭,৫০,০০০/- (সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা মোঃ নজরুল ইসলাম এর ছেলে চাকুরীতে যোগদান করার পর নেবেন বলে জানান। ইংরেজী ০১/০১/২০২২ তারিখ বেলা অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় প্রতারক মাহাবুব হাওলাদার জনৈক মোঃ ইব্রাহীম হাওলাদার এর বাড়ীতে যান এবং নগদ ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা সহ ইসলামী ব্যাংক ভান্ডারিয়া শাখার ইব্রাহীম হাওলাদার এর মাতা মিনারা বেগম এর সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০৯৬৩৮০১ থেকে ৪,০০,০০০/- (চার লক্ষ) টাকা এবং ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা সহ সর্ব মোট ৭,০০,০০০/- (সাত লক্ষ) টাকার ০২ টি (দুই) চেক প্রতারক মাহাবুব গ্রহণ করেন। প্রতারক মাহাবুব আশ্বাস দেয়, আগামী ০২(দুই) মাসের মধ্যে আপনাদের ছেলেরা চাকুরীতে যোগদান করবে। যদি চাকুরী দিতে ব্যর্থ হই তবে উভয় পক্ষকে সকল টাকা ও চেক ফেরত দিব। প্রতারক মাহাবুব ধার্য তারিখের মধ্যে চাকুরী না দিয়া তাহাদের সাথে বিশাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারণা করে সকল টাকা আত্নসাৎ করেন। ভুক্তভোগীরা টাকা ও চেক ফেরত চাইলে প্রতারক মাহাবুব তা দিতে অস্বীকার করেন। উল্লেখিত বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংশা না হওয়ায় মোঃ নজরুল ইসলাম মানিক মিয়া ভান্ডারিয়া থানায় নিজের স্বাক্ষরিত ০১ (এক) টি এজাহার দায়ের করলে ভান্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ উল্লেখিত বিষয়ে ভান্ডারিয়া থানার মামলা নং- ২৩, তারিখ- ২৫/০৭/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড রুজু করেন এবং মামলাটির তদন্ত ভার এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুল ইসলাম এর উপর অর্পণ করেন। তদন্তকারী কর্মকতা এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ও বিশ্বস্থ সোর্স নিয়োগ করে প্রতারক মাহাবুব হাওলাদারকে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, লবনচড়া ও হরিণটানা থানা এলাকায় একটানা তিন দিন অভিযান পরিচালনা করে ইংরেজী ২৭/০৭/২০২২ তারিখ রাত ০০.৩০ ঘটিকার সময় হরিণটানা থানাধীন বনলতা আবাসিক এলাকার ডাঃ মিজানুর রহমান এর বাসা হতে আত্নগোপনে থাকা প্রতারক মাহাবুবকে গ্রেফতার করেন। প্রতারক মাহবুবকে মামলার ঘটনা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি প্রতারক চক্রের সদস্য আরিফুল ও মনির এর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেন। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজসে ঢাকা, খুলনা, চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন শহরে অবস্থান করে নিরীহ ও সহজ সরল লোকদেরকে কারারক্ষী পদে চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। প্রতারক মাহবুব এর তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিয়ে ডিএমপির পল্টন, খিলগাঁও, উওরা পশ্চিম, মীরপুর, শাহআলী থানা এলাকায় একটানা আরো ০২ দিন অভিযান পরিচালনা করে ইংরেজী ২৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় উওরা পশ্চিম থানাধীন উওরা রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের সামনে হতে প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য মনির হোসেন (৩৫), পিতা- মৃতঃ আবু তাহের মৃধা, গ্রাম- গাজী মাহামুদ, থানা ও জেলা-বরগুনাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে জিজসাবাদে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক মাহবুব ১৭ জনের তালিকা করেন। প্রতারণার মাধ্যমে আত্নসাৎকৃত ব্যাংক চেক ও চুক্তিনামা উদ্ধার করা হয়েছে।