এইচ এম জুয়েল:- দেশের গবাদি পশুর শরীরের কোনো অংশই ফেলনা নয়। “কবিগুরুর এই কথা- ‘জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা /ধুলায় তাদের যত হোক অবহেলা’।। এখনো দেশের অধিকাংশ গবাদিপশুর হাড়, শিং দাঁত ও খুর ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। মাংস এবং চামড়ার কদর তো সবার জানা। বর্তমানে দেশে জবাইকৃত গরু মহিষ ছাগলের মাংস ও চামড়া ছাড়া অবশিষ্টাংশ বিদেশে রপ্তানি করে আয় হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। সংগ্রহ পশুর হাড় শিং
জবাইয়ের পর একটি গরুর আকারভেদে ১৫ থেকে ২৫ কেজি হাড় ফেলে দেওয়া হয়। যদিও বর্তমানে মোট বর্জ্যের মাত্র ২০ শতাংশ সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাকি ৮০ শতাংশ পচে-গলে নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশকে দুষিত করছে। পুরো বর্জ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা গেলে এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রির সুযোগ না থাকা এর একটি বড় কারণ। পশু জবাইয়ের পর উচ্ছিষ্ট বর্জ্য যেমন- হাড়, শিং, অণ্ডকোষ, লিঙ্গ, মূত্রথলি, নারি ভুড়ি, মাথা হাড়, দাঁত, খুর, চর্বি ও রক্ত সাধারণত ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু এসব উচ্ছিষ্ট সামগ্রী বিক্রি করেই বছরে কোটি টাকা আয় করছেন কিছু মানুষ। পশুর উচ্ছিষ্ট দোকানে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে
রাজধানীর হাজারীবাগ, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা এবং হাসনাবাদে রয়েছে পশুর উচ্ছিষ্ট বর্জে্যর বাজারও। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, পশুর উচ্ছিষ্ট বর্জে্যর অধিকাংশই রপ্তানি হয় চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে। রাজধানীর যেসব এলাকায় পশু জবাই করা হয়, সেসব এলাকা থেকে এসব সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় পশু জবাইয়ের পর পশুর ফেলে দেয়া উচ্ছষ্ট সংগ্রহ করে হাড্ডিপট্টির ভাঙারি দোকানে বিক্রি করেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। কাঁচা হাড়, মাথা হাড়, দাঁত বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি, আর শুকনো হাড়ের কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা। কেজি হিসেবে পশুর অণ্ডকোষ ও লিঙ্গ ২৫ থেকে ৪০ টাকা, শিং ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চর্বি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, রক্ত ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, হাড় ওষুধের ক্যাপসুলের কাভার, সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। গরু-মহিষের লিঙ্গ সংগ্রহ করা হয়েছে।
সারা বছর ধরে বিভিন্ন বাজার থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হলেও তা জমে ওঠে কোরবানির ঈদে। কারখানাগুলোয় প্রথমে হাড় শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। হাড়ের গুঁড়ো ক্যাপসুলের আবরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি হাড় ও হাড়ের গুঁড়ো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। গরু, মহিষ ও ছাগলের শিং ভারতে রপ্তানি হয়। গবাদি পশুর শিং গবাদি পশুর শিং
শিং দিয়ে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি হয়। সাবান তৈরিতে ব্যবহার হয় চর্বি। রক্ত শুকিয়ে পোল্ট্রি ও পাখির খাবার তৈরি হয়। নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা, , পায়ের খুর দিয়ে অডিও ভিডিওর ক্যামেরার ক্লিপ, এছাড়া মাথার হাড় মেলামাইন তৈরিসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। পশুর শিং দিয়ে তৈরি হয় চিরুনি, বোতাম, এক্স-রে ফিল্ম, ক্যামেরার ফিল্ম, ঘর সাজানোর শো-পিছ। পুরান ঢাকার হাজারীবাগের হাড্ডিপট্টিতে পশুর এসব বর্জ্য কেনার ৩০ থেকে ৪০টি ভাঙ্গারির দোকান রয়েছে। সেসব দোকানে গরু-মহিষের হাড় ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচাকেনা চলে। হাড্ডিপট্টি বিক্রি করার জন্য হাড় শিং
হাজারীবাগের এক ব্যবসায়ী জানান, হাড় ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয় প্রতি টন ২৩ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। তারা নিজেরই হাড় গুঁড়ো করেন মেশিনে। প্রতি মাসে টনের পর টন পশুর হাড় প্রয়োজন হয়। জাপান, কোরিয়া, চীন, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য সুসেড রুলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পশুর অণ্ডকোষ দিয়ে তৈরি হয়। চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা অণ্ডকোষ কিনে বিদেশে পাঠান। গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি তৈরী(ওমাসম) দিয়ে উন্নত মানের সুপ ও সালাদ তৈরি হয় এবং তা চীনাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় খাবার বলে বিবেচিত। এশিয়ার দেশ ছাড়াও এখন ইউরোপেও ওমাসম রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে পশুর বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ৩০ থেকে ৩৫টির মতো কারখানা রয়েছে, যেখানে হাড় গুঁড়ো করা হয়। রাজধানীর হাজারীবাগ,কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী ও কোনাপাড়া ।চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় চারটি । খুলনার লবণচরায় তিনটি হাড় ভাঙ্গা কারখানাও প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার হাড় বিদেশে রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে। বিক্রির জন্য আরতে নিয়ে আসছি ব্যবসায়ীরা
এছাড়াও সৈয়দপুর, বরিশাল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও হাড়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। আড়তে বিক্রি করা যেতে পারে। এতে এসব অপ্রচলিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে।’ এবং হাড় রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বছরে শতকোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। চীন ও থাইল্যান্ডে গরুর হাড়ের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে হাড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।