এইচ এম জুয়েল:- ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৮২ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লে. জে. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে একাদশী আদেশের বলে একযোগে দেশের ৪৬০টি থানাকে উপজেলায় এবং ৪২টি মহাকুমা কে জেলায় রূপান্তিত করেন।
জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে এক জনসভায় বলেছিলেন আমি যদি উপজেলা পদ্ধতি চালু না করতাম তাহলে অনেকেই আজ নেতা হতে পারতেন না।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা দুঃখের সাথে বলেন আজ যারা জনপ্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় বড় নেতা কিন্তু তারা উপজেলার সৃষ্টির ইতিহাস জানেন না এবং জেনেও অনেকে তা পালন করেন না।
আজ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও র্যালীর মধ্যে দিয়ে (৩৭তম) উপজেলা দিবসটি পালন করাহয়।
প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে সাহসী পদক্ষেপ ছিল উপজেলা ব্যবস্থা। এ পদক্ষেপের কারণে দেশের সমস্ত থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। উপজেলা পরিষদ গ্রামীণ স্থাণীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যম পর্যায়ের স্তর। উপজেলা পরিষদের উপরে জেলা পরিষদ নিচে ইউনিয়ন পরিষদ এবং সমান্তরালে কোথাও কোথাও পৌরসভা রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্বতন থানা বা নবগঠিত উপজেলার যাত্রা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি। তাই উপজেলা পরিষদের এ নবযাত্রায় এর আইনগত কাঠামো, অবস্থান, আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং তার সাথে যুক্ত সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন বা আইনের উৎস ও নির্দেশক। সংবিধানের নির্দেশনা (১১, ৫৯ ও ৬০) অনুসারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন প্রশাসনিক কাঠামো হিসাবে উপজেলায় নির্বাচিত স্থাণীয় সরকার প্রতিষ্ঠার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে কীভাবে বা কোন আদলে তা গঠিত ও কার্যকর হবে সে ব্যাপরে জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
দীর্ঘদিনের শূন্যতা কাটিয়ে ২০০৯ সনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও ১৯৯৮ সনে পাশকৃত স্থানীয় সরকার (উপজেলা) পরিষদ আইন ২০০৯ সনে নতুনভাবে জাতীয়সংসদ কর্তৃক পুনঃগৃহিত এবং ২০১১ সনে সংশোধিত। তাই উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর করার আইনগত ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবিক পক্ষে ২০০৯ সনেউপজেলা পরিষদের নবতর যাত্রা শুরু হয়।
১৯৮২ সালে ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (থানাপরিষদ এবং থানা প্রশাসন পুনঃগঠন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশের আওতায় প্রথমে উন্নীত থানা পরিষদ গঠন করা হয় এবং থানা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। অতঃপর সংশোধনীর মাধ্যমে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুর্নগঠন) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ জারি করে। উন্নীত থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদ রুপ দেয়া হয় এবং থানা প্রশাসনকে উপজেলা প্রশাসন নামে অভিহিত করা হয়। অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, প্রতিনিধি সদস্য, অফিসিয়াল সদস্য এবং মনোনীত সদস্য নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠন করা হয়। উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অফিসিয়াল সদস্য ছাড়া অন্যান্য সদস্যগণের ভোটাধিকার ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের দায়িত্ব পালনসহ সকল বিভাগের কাজের সমন্বয় সাধন করতেন। ১৯৮২ সালে সরকারী রেজুলেশন অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে সরকারী কার্যাবলীকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এ দু-ভাগে বিভক্ত করা হয়। এ রেজুলেশন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিষয়সমুহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকার সংরক্ষিত বিষয়াদি এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ন উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব পালন করতেন। হস্তান্তরিত বিষয়সমুহ ছিল কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থা, প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, পল্লী পূর্তকর্মসুচী বাস্তবায়ন, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন, পশুপালন ও মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ। সংরক্ষিত কাজের তালিকা অনুযায়ী সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার বিচার, রাজস্ব প্রশাসন এবং নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ, বৃহৎ শিল্প, খনন ও খনিজ উন্নয়ন ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করতেন। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা উপজেলা পরিষদকে দেয়া হয়। দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলা পরিষদকে সরকার কর্তৃক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে প্রতি আর্থিক বছর অনুদান দেওয়া হতো। উপজেলা পরিষদকে করারোপ ও আদায়ের ক্ষমতা দেয়া হয়। এর নিজস্ব আয়ের উৎস্যসমুহ ছিল, যেমন – জলমহাল, হাটবাজার, ফেরিঘাট, ব্যবসা বানিজ্য ও বৃত্তির উপর কর, প্রমোদ কর ইত্যাদি। এ পদ্ধতির আওতায় হস্তান্তরিত বিষয়সমুহের কর্মকর্তাদেরকে উপজেলা পরিষদে প্রেষণে ন্যস্ত করা হয় এবং বিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত বিষয়াদির কর্মকর্তাদেরকে (মুনসেফ এবং ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া) প্রয়োজনবোধে উপজেলা পরিষদের নিকট জবাবদিহি করতে হতো। এছাড়া ১৯৮৮ এর পূর্ব পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের কার্য পরিচালনায় সহযোগিতা, বাজেট ও কর ধার্য প্রস্তাব অনুমোদন এবং চেয়ারম্যান, সদস্য ও সচিবদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উপজেলা পরিষদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনগঠন)(রহিতকরন) অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে। উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তির পর বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে সরকার নির্বাহী আদেশে প্রতিটি থানায় থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট থানায় অন্তর্ভূক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত হয়। নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন গণের মধ্য থেকে প্রতি মাসে একজন থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য কমিটি উপদেষ্টা করা হয়। কমিটির মূল কার্য পরিধির মধ্যে ছিল:
(ক) উন্নয়ন কার্যক্রম ও প্রকল্প বাছাই, পর্যালোচনা ও সমন্বয় সাধন;
(খ) ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উপদেশ / পরামর্শ দেয়া,
(গ) আন্তঃ ইউনিয়ন ও আন্তঃ খাত সমস্যা নিরশন,
(ঘ) উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের নিকট প্রেরণ ইত্যাদি। উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রবর্তন করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে উপজেলা পরিষদ আইন পাশ করা হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদের কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার উপজেলা পরিষদ আইন’ ১৯৯৮ বাতিলপূর্বক স্থানীয় সরকার(উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ জারি করে। ক্ষমতা গ্রহনের সাথে সাথে বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে সমগ্র দেশব্যাপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। জাতীয় সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক জারীকৃত স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮ নির্দিষ্ট সময়ের
“৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে”
__________ পল্লীবন্ধু এরশাদ।———-
১। পল্লীবন্ধু এরশাদ প্রবর্তিত ৪৬০টি উপজেলার ফলশ্রুতিতে প্রশাসনই শুধু গ্রামের মানুষের কাছে যায়নি- উন্নয়নের জিয়নকাঠি চলে গিয়েছিলো গ্রামে। জনগণের দোড় গোড়ায় বিচার ব্যবস্থা পৌঁছে গেছে।
২। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে মোট ৪৬০ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়োগ করেছেন ।
৩। প্রতিটি জেলা থেকে উপজেলা এবং উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত LGED’র মাধ্যমে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ,শতশত ব্রীজ,কালভার্ট স্থাপন করেছেন ।
৪। প্রতিটি উপজেলায় ১৭ জন করে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন ।
৫। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন এবং সেখানে একজন করে এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ করে স্বাস্থ্য সেবা জনগনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছেন ।
৬। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কুটিরশিল্প স্থাপন করেছিলেন।
এছাড়াও অনেক উন্নয়ন , সেবা,শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমাদের প্রিয় নেতা করেছন ।
৭। পল্লীবন্ধু এরশাদ উপজেলা করে গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, দালান-কোঠা নির্মানের ফলে ৬৮ হাজার গ্রাম লাভ করেছে শহরের আমেজ।