উখপমহাদেশের নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ
মানিক মিয়ার ৫২ মৃত্যুবার্ষিকী পালন।
এইচ এম জুয়েল :- উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক বাংলাদেশে সাংবাদিকতার জগতে উজ্জ্বল নক্ষত্র মানিক মিয়ার আজ (১লা জুন) ৫২ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থান, ইত্তেফাক ভবন, ধানমন্ডি বাসা ও তার পৈত্রিক ভিটা পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি সাংবাদিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। তথাকথিত নিরপেক্ষতা, মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিই সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—এই প্রভাত নিয়ে তিনি নিরপেক্ষতা মানুষের মুক্তির পক্ষেই নিজেকে, সাংবাদিকতায় নিয়োজিত করেছিলেন। কোনো মতবাদ প্রচারণা নয়, সাংবাদিকতার একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য যে গণমানুষের মুক্তির জন্য নিয়োজিত থাকা, ন্যায়ের প্রশ্নে অবিচল থাকা—এই কথা তিনি তার সারা জীবনের কাজ দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন।
দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে জীবনব্যাপী তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) তার হাত ধরেই সাংবাদিকতা এক নতুন মোড় নিয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সেজন্য তিনি বাংলার মানুষের কাছে ‘নির্ভীক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।
গণমুখী সাংবাদিকতার পথিকৃত্ ব্যক্তিত্ব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ১৯৬৯ সালের এই দিনে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি আবাসিক হোটেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্ষণজন্মা এই সাংবাদিক। বর্তমান বাংলাদেশে নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রেরণা হিসেবে বিরাজ মান।
দৈনিক ইত্তেফাক ছিল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের মুখপত্র—ইত্তেফাক সব সময় মনে করেছে, সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের পাশে থেকে কথা বলা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। ইত্তেফাক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য যে ভূমিকা পালন করেছিল, তা ছিল সময়ের দাবি। আওয়ামী লীগের জন্য সেই সময়ের ইত্তেফাক ছিল বড় একটি ঢাল স্বরূপ।
স্বাধীকার আন্দোলনে দৈনিক ইত্তেফাক, মানিক মিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান ছিল এক সুতায় গাথা। সে কারণে স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্ষুশূল হয়ে পড়ে মানিক মিয়া ও ইত্তেফাক। মানুষের মুক্তির পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছিলেন মানিক মিয়া, জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালে দৈনিক ইত্তেফক ও মানিক মিয়া ছিলেন কান্ডারী। পাক সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে আপসহীনভাবে মানিক মিয়া সত্য প্রকাশ করে গেছেন। একসময় তত্কালীন পাকিস্তান সরকারের সামরিক শাসক ইত্তেফাকের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সে সময় সরকারের সঙ্গে আপস করলে তিনি ইত্তেফাক প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবং তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংবাদিকেরা জনমানুষের সংবাদপত্রের প্রতি যে বিশ্বাস, তার সঙ্গে আপস করেননি। তিন বছর পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রেখেছিলেন। সামরিক জান্তা ও স্বৈরাচারী শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উদাহরণ তিনি সৃষ্টি করে গেছেন, তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের কথা সহজ ভাষায় তিনি মানুষের সামনে তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন আধুনিক সংবাদপত্রের রূপকার, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। ‘রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি’, ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ আর ‘রঙ্গমঞ্চ’ শিরোনামে কলাম লিখে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলেন মানিক মিয়া। ‘মোসাফির’ শিরোনামে তার ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ কলামে নির্ভয়ে সত্য উচ্চারণ, অনন্য রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং গণমানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই বাংলার মানুষের হূদয়ে তিনি অবিনশ্বর হয়ে রয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘আমার মানিক ভাই’ শিরোনামে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘…আমার ব্যক্তিগত জীবনে মানিক ভাইর প্রভাব যে কত গভীর, তা ভাষায় ব্যক্ত করার মত নয়। ১৯৪৩ সাল থেকে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। সে পরিচয়ের পর থেকে সারাটা জীবন আমরা দু’ভাই একসাথে জনগণের অধিকার অর্জনের সংগ্রাম করেছি।…একটা বিষয়ে আমরা উভয়ই একমত ছিলাম এবং তা হল, বাংলার স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ভিন্ন বাঙালির মুক্তি নেই, এ বিষয়ে আমাদের মাঝে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ ছিল না। আর ছিল না বলেই নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও দু’জন দু’ফ্রন্টে থেকে কাজ করেছি। আমি কাজ করেছি মাঠে-ময়দানে আর মানিক ভাই তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর সাহায্যে।’
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ‘আজ যে স্বাধীনতার সোনালি ফসল আমরা ঘরে তুলছি সেজন্য ইত্তেফাক ও মানিক মিয়ার একক অবদান অসাধারণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ইত্তেফাক একটি অবিস্মরণীয় নাম হয়ে থাকবে। আজকের সাংবাদিকতায় বাণিজ্য ও মুনাফা প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু সে যুগের সাংবাদিকতায় আদর্শ এবং তার জন্য লড়াই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। সাংবাদিকদের গাড়ি-বাড়ি ছিল না, কিন্তু ছিল অটুট আদর্শ, নিষ্ঠা। মানিক মিয়া শুধু সংবাদপত্রের মালিক ছিলেন না, ছিলেন জনজীবনভিত্তিক সাংবাদিকতার পথিকৃত্।’নীতির প্রশ্নে, বাংলার মানুষের অধিকারের বিষয়ে মানিক মিয়া কখনো আপস করেননি। দৈনিক ইত্তেফাক ছিল তার সেই সংগ্রামী জীবনের প্রধান হাতিয়ার। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্ব দেশের সাংবাদিকতাকে একটানে বদলে দিয়েছিলেন। মানুষের প্রত্যাশা, বেদনাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। শুধু সাংবাদিক কিংবা রাজনীতির প্রথপ্রদর্শকই নন, মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
এদিকে তার জন্মস্থান ভাণ্ডারিয়ায় জাতীয় পার্টি (জেপি) উদ্যোগে পূর্ব ভাণ্ডারিয়ায় মিয়া বাড়ি (মন্ত্রী বাড়ি) জামে মসজিদ ও ভান্ডারিয়া অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা, দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সীমা রানী ধর, ভাণ্ডারিয়ার শাখার আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, এসময় সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একনজরে মানিক মিয়া
১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলাধীন ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত মিয়া পরিবারে জন্ম। তাঁর বাবার নাম মুসলেম উদ্দিন মিয়া।
শৈশবেই মানিক মিয়ার মা মারা যান।পূর্ব ভান্ডারিয়া
মডেল প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু। সেখানে কিছুদিন পড়ার পর তিনি ভর্তি হন ভান্ডারিয়া বিহারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তখন থেকেই তিনি ছিলেন সহচর-সহপাঠীদের কাছে ক্ষুদে নেতা। ভান্ডারিয়া বিহারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মানিক মিয়া অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর চলে যান ১৯২৭ সালে পিরোজপুর জেলা সরকারী হাইস্কুলে। সেখান থেকেই তিনি কৃতিত্বের সাথে ১৯৩১ সালে বাংলায় লেটার নম্বরসহ ম্যাট্রিক পাস করেন।
১৯৩৫ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ ও বাংলায় লেটার নম্বর পেয়ে বিএ পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৯৩৬ সালে পিরোজপুর জেলা মুন্সেফ আদালতে চাকরি গ্রহণ করেন।পিরোজপুর জেলা মুন্সেফ আদালতে কর্মরত
থাকাবস্থায় ১৯৩৭ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার অন্তর্গত গোয়ালদি গ্রামের অভিজাত পরিবারের মরহুম খোন্দকার আবুল হাসান সাহেবের কন্যা মাজেদা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। চাকরি করার সময় তিনি ১৯৪২ সালে একবার বরিশাল জেলা তৎকালীন
মুসলিম লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পান। ১৯৪৩ সালে তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কলকাতায় পরিচয় ঘটে। কোর্টের চাকুরীকালীন সময়ে জনৈক
মুন্সেফ একদিন তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করেন।
এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করে ১৯৪৪ সালে চাকুরি ছেড়ে দেন।
১৯৪৪ সালে মুন্সেফ আদালতে চাকরি ছেড়ে বাংলা
সরকারের অধীনে জেলা জনসংযোগ অফিসার
হিসেবে চাকরিতে যোগদান। সে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার
পর তিনি ১৯৪৫ সালে কলকাতায় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত। রাজনৈতিক প্রচারকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে একটি প্রচারপত্রের প্রয়োজন ছিলো এবং সেই চিন্তা থেকেই মানিক মিয়ার ও সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে ১৯৪৬ সালে আবুল মনসুর আহমেদের সম্পাদনায় বের হয় ‘দৈনিক
ইত্তেহাদ’।‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ প্রকাশিত হলে ১৯৪৭ সালে আগস্ট মাসে মানিক মিয়া পরিচালনা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে যোগদান করেন।এখানেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। এ পত্রিকার সাথে মানিক
মিয়া মাত্র দেড় বছরের মতো যুক্ত ছিলেন।
এই পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁর গণমাধ্যম জগতের
সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালে দেশ
বিভাগের পর থেকে পত্রিকাটি ঢাকায় নিয়ে আসার
অনেক চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তিনবার পত্রিকাটিকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশে বাধা দেয়া হয় এবং এখানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বার বার এভাবে পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। মানিক মিয়াও তখন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালেই পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে নামে। এই ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালির পাকিস্তান মোহ কিছুটা কাটতে থাকে। ১৯৪৯
সালে মুসলীম লীগের বিরোধী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়। একই বছরে এই রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক -এর। আবদুল হামিদ খান ভাসানী পত্রিকাটির আনুষ্ঠানিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
১৯৪৯ সালে সোহরাওয়ার্দীর কলকাতা ত্যাগের পর মানিক মিয়ার পূর্ব বাংলায় আগমন। ১৯৪৯ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকা থেকে দলের মুখপত্র হিসেবে ‘সাপ্তাহিক ইত্তেফাক’ প্রকাশিত হলে এ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।১৯৫১ সালে এ বছরের ১৪ আগস্ট মানিক মিয়া সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদনাসহ পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাঁর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক থেকে দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয়। এ সময়ে দৈনিক ইত্তেফাকপত্রিকা আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনকে সমর্থন করে সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে জোরালো সম্পাদকীয় প্রকাশ করেন। ১৯৫২ সালে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্মেলনে যোগদান করেন।
১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহযোগিতায় দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠা করেন এবং পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকালে পত্রিকার
মাধ্যমে যুক্তফ্রন্টকে সার্বিকভাবে সমর্থন করেন। ১৯৫৯ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর সামরিক আইন লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগে মানিক মিয়া গ্রেফতার হন।
১৯৬২ সালে সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার হলে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জননিরাপত্তা আইনে ৬ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়াও গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে কারাগার থেকে ১৪ আগস্ট মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক প্রেস ইন্সটিটিউটের পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরে সৃষ্ট দাঙ্গা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে তা প্রতিরোধে স্থাপিত
দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির প্রথম সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনকে সমর্থন করেন
এবং পরিনামে তিনি ১৫ জুন গ্রেফতার হন।
ইত্তেফাকসহ তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘ঢাকা টাইমস’ ও ‘পূর্বাণী’
বন্ধ করা হয় ও নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস ১৬ জুন
বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১৯৬৭ সালে ঢাকার পুলিশ হাসপাতাল থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে দুর্বার গণ-আন্দোলনের মুখে পত্রিকা ও প্রেস মুক্ত হয় এবং ১০ ফেব্রুয়ারি পত্রিকা পুনর্জন্ম লাভ করে। গণআন্দোলনের মুখে সরকার ইত্তেফাকের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ইত্তেফাকের রাজনৈতিক হালচাল ও পরবর্তী সময়ে মঞ্চে নেপথ্যে কলামে মোসাফির ছদ্মনামে নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখতেন।