মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো হাজার হাজার মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ করেন। অনেকে সরাসরি বিক্ষোভে অংশ না নিলেও শৈল্পিক ভঙ্গিতে বাসাবাড়ি বা যানবাহন থেকেও প্রতিবাদ করেছেন। অবশ্য এখন পর্যন্ত সামরিক জান্তা সরকারকে এই আন্দোলন ঠেকাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা (সেনাবাহিনী) খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ আগের অভিজ্ঞতা বলছে, সামরিক বাহিনী শুরুতে পর্যবেক্ষণ করে, এরপর চরম আঘাত করে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নামে প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ ছিলেন। বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। বিক্ষোভকারীদের হাতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ছবি ছিল। অনেকে লাল রঙের পোশাক পরেন। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পতাকার রং লাল। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ব্যানার বহন করতেও দেখা গেছে। একটি ব্যানারে লেখা ছিল ‘ভোটারদের সম্মান কর’। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন এনএলডি বিপুল জয় পায়। জনগণের ভোটের রায়ের সেই বিষয়টিকে ব্যানারে তুলে ধরা হয়।
এই বিক্ষোভের প্রতীক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে ওয়েব সিরিজ হাঙ্গার গেমের তিন আঙুলে স্যালুট দেওয়ার ছবি। অনেকে এর সমর্থনে লাল বেলুন নিয়ে হাজির হন। বিক্ষোভের সমর্থনে গাড়ি ও বাস থেকে একযোগে বাজানো হয় হর্ন। অনেক মানুষ তাদের জানালায় লাল স্টিকার লাগিয়ে এনএলডির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বিক্ষোভকারী মেও উইন এএফপিকে বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ গণতন্ত্র না পাই, এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের বিভিন্ন সড়কে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পুলিশ কাঁটাতার ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে। কিছু জায়গায় জলকামান স্থাপন করা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে গোলাপ ও পানির বোতল দেয় এবং আহ্বান জানায় তারা যেন নতুন সরকারকে নয় বরং সাধারণ মানুষকে সমর্থন করে।
ইয়াঙ্গুন ছাড়াও মিয়ানমারের একাধিক শহরে ছোটখাটো বিক্ষোভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবারও দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গুন ও রাজধানী নেপিদোয় হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। তারা দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ বন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানান। সামরিক জান্তা দেশটিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় টুইটার ও ফেসবুক।
১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। এর মাধ্যমে সু চির নির্বাচিত এনএলডির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। একই দিন মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।
এদিকে সেনাশাসন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছেন মিয়ানমারের ৩০০ জন এমপি। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তারা নিজেদেরকে জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হিসাবে ঘোষণা করে ভিডিও কনফারেন্সেও মিলিত হন। শুক্রবার দেওয়া ওই বিবৃতিটি এনএলডির ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।