লাশের গন্ধে বাতাস টা হয়েছে ভার,
আপনের খোজে স্বজন ঘোরে সুগন্দা নদীর পার।
এইচ এম জুয়েল:–এত শোক সইবো কেমন করে !বাংলাদেশে এই প্রথম জলপথে অগ্নিকাণ্ডে বড় দুর্ঘটনা
গত বৃহস্পতিবার (২৩ডিসেম্বার) ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছার পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডে ইতিমধ্যে প্রাণ গেছে ৩৮ জনের। হাসপাতালে আহত হয়ে ভর্তি শতাধিক দগ্ধ মানুষ।
লঞ্চে থাকা বরগুনা বাবনার অক্ষত যাত্রী মো:মজিবর তৃণমূল সংবাদকে বলেন আমি লঞ্চের নিজতলায় ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ আগুন আগুন বলে চিৎকার করছে কিছু লোকজন আমি জেঁগে দেখি লঞ্চের পিছনে আগুনের কুণ্ড মমুহুর্তের মধ্যে দ্রুতই আগুন পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। শীতের রাতে লঞ্চের বেশির ভাগ যাত্রী তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। তবে লঞ্চটি মাজনদী থেকে কিনারে আসতে প্রয় ১ঘন্টার মত সময় লাগছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান তিন ঘণ্টার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন লঞ্চের অন্তত ৩৮জন যাত্রী। আর প্রাণ বাঁচাতে লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে নিখোজ অনেকে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু এদের শনাক্ত করা যায়নি তবে তাঁদের লাশ ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর ৩৩টি লাশ ঝালকাঠি থেকে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে রাখা হয়েছে।
ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৩ জন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থঅ গুরুতর।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ পরিদর্শনে এসে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগুনে পুরো একটি লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে। কারণ, এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি।পুড়ে যাওয়া লাশ প্রতি দের লাখ টাকা করে দেওয়া হবে সরকারীর ভাবে।
লঞ্চে থাকা যাত্রী পাথরঘাটা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, ‘লঞ্চের প্রায় সবাই ঘুমে ছিল। ঘুম থেকে উঠে লঞ্চের দোতলার ডেকে দাঁড়াই। সেখানে প্রায় এক থেকে দেড়শো লোক দাঁড়ানো। আরও অনেকে ভেতরে, পেছনে ছিল। সেখানে এত ধোঁয়া যে ধোঁয়াতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তখন আমি চিন্তা করলাম যে এখানে থাকলে হয়তো বাঁচা যাবে না। যদিও আগুন সে পর্যন্ত আসেনি, তবে ধোঁয়াতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর প্রায় ১৫ মিনিট পরে আমার স্ত্রী এবং আমি, রেলিং ক্রস করে লাফ দিয়ে নিচ তলার ডেকে পড়ি। স্ত্রী আগে লাফ দেয়। এতে তার পা ভাঙলেও সেসময় বুঝতে পারেনি। একই রকম স্পেস সেখানেও। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি। ভয়াবহতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘তখন অবস্থা এমন যে ডানে আগুন, বামে পানি। এখন কোথায় মরবো? এমন অবস্থা আল্লাহর রহমত, লঞ্চটা স্রোতের টানে দুলতে দুলতে একেবারে তীরে চলে আসে। ‘লঞ্চটা তীরে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোকজন আমরা যারা সামনে ছিলাম, তারা নেমে আসি।
ঘটনাস্থন পরিদর্শন করেন RAB এর মহাপরিচালক,বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশের ডিআইজি।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে মৃত ২৯ জনের জানাজা নামাজ। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বরগুনা সার্কিট হাউস সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে জানাজা অংশগ্রহণ করেছেন হাজারো মানুষ। লঞ্চ ঘটনায় নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ৩৭ জনই বরগুনা জেলার বাসিন্দা।
নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে সুগন্ধা নদীতে আপনজন
গতকাল সারাদিন আমরা ঝালকাঠিতে এসে নদী আর লঞ্চে পোড়াদের মধ্যে আমার স্বজনদের খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি। এখন ট্রলার নিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছি। যদি কোথাও লাশ ভেসে ওঠে সেই আশায়। গতকাল নদীতে কোস্টগার্ডকে টহল দিতে দেখেছি। আজ সকাল থেকে আর দেখছি না।
লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় পোনাবালিয়া গ্রামের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন।
অপরদিকে ঝালকাঠি লঞ্চের অগ্নিকাণ্ড দেখে বাড়ি ফেরার পথে কাঠালিয়া উপজেলা শহরের নিকট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন : লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা এর আগে দু–একটা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলো খুব বড় আকার হয়নি। লঞ্চে আগুন লেগে এত প্রাণহানির ঘটনা দেশে এটাই প্রথম । ইঞ্জিন রুম একটি ডেটিকেটেড অঞ্চল এর পাশে ক্যানটিন এটা কোন বিজ্ঞান সম্মত নায়।লঞ্চে নির্বাপণ যন্ত্র ছাড়াও আরেকটি কথা হলো, লঞ্চের কর্মীরা যে আগুন নেভাবেন, এর জন্য তো প্রশিক্ষণ লাগবে। হয়তো ১০ বছর আগে একবার প্রশিক্ষণ হয়েছিল, এর কোনো ধারাবাহিকতা না থাকায়। এরকম দুর্ঘটনা প্রায় ঘটছে। এসব বিষয়ে সরকারী ভাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে প্রশিক্ষণের আওতায় না আনলে দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া বড় কঠিন হবে।
অন্যান্য দেশে তিন বা ছয় মাস পর এসব প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকে। তা না হলে লঞ্চের নিবন্ধন নবায়ন হবে না। আসলে শুধু অগ্নিকাণ্ডনিরোধী নিরাপত্তা বিষয় নয়। পুরো ব্যবস্থাটাই তো ত্রুটিপূর্ণ। ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলে সেটা একেক সময় একেকভাবে প্রকাশ পাবে। একসময় লঞ্চ ডুবছে, কখনো দূষণ ছড়াচ্ছে, কখনো অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এগুলো আসলে লক্ষ্মণ। শুধু মাস্টার আর ড্রাইভারদের ধরে জরিমানা করে বা শাস্তি দিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পড়ে থাকে অফিসের আলমারিতে। নিরাপদ যাত্রী আন্দোলনকারীরা নৌযানের ফিটনেস নিয়ে একাদিক বার আন্ধোলন করেও কোন কাজে আনতে পারেনি।সরকারি ভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দিন। বারবার বলা হচ্ছে, ৮–১০ জন সার্ভেয়ার দিয়ে সাত–আট হাজার নৌযান দেখভাল করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেউ মূল জায়গায় হাত দিচ্ছি না। ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।