ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতী অসহয় বাঘ-হরিণ-কুমির-বানর একই এস্থানে।
এইচ এম জুয়েল:-ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমা তিথির জোয়ারের কারণে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ৫-৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস, বাংলাদেশ গত বছর হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে কয়েকটি জলযান, ওয়াচ টাওয়ার, গোলঘর, রাস্তা, ফুট রেইল ক্ষতিগ্রস্ত। এবং জোয়ারের পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত চারটি হরিণ সহ বিভিন্ন জলজ ও বন্যপ্রাণী।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী ও খালে পানি বাড়তে থাকে। প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। পানির তোড়ে পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি,(সিড়ি) ৬টি জলযান (ট্রলার) দুটি গোলঘর, একটি ফুট রেইল, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্তত দশটি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে। সুন্দরবনের মধ্যে সুপেয় পানির সংস্থান হিসেবে পরিচিত ৯টি মিঠা পুকুরে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। সুন্দরবন থেকে দুটি এবং লোকালয় থেকে ২টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুটি কুমিরের শেড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র করমজলের কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয়নি, সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসে কুমিরের দুটি শেড নষ্ট হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্য প্রাণিগুলোকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। এ যাত্রায় কোনো বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়নি। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদিন জানান, স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। এই পানিতে বনের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রাজেশ্বরে একটি হরিণের, উত্তর তাফালবাড়িতে একটি, সুন্দরবনের দুবলা ও কচিখালী এলাকায় একটি করে হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আর কোনো বন্যপ্রাণী মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সুন্দরবনের জেলে পল্লী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) মো: তানভীর হাসান ইমরান বলেন পূর্ণিমার জোয়ার আর পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দুই মিলে আরো শক্তিশালী হয়েছে ইয়াস। হালকা বৃষ্টি তীব্র ঢেউ বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার বনের ভিতর প্রবেশ করেছে। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানতে পারে এমন ধারণা জীব জন্তুরা সংকেত পেয়ে থাকে প্রকৃতিগতভাবেই। তাই হরিণের বাচ্চারা মিষ্টি পুকুর পাড়ে আশ্রয় নিয়েছে এখানে সাপ, বানর, হরিণ, শুকুর, কুমির বন মোরগ সহ অন্যান্য প্রাণীরা খণ্ড খণ্ড উঁচু মাটিতে একই স্থানে অবস্থান করতে দেখা গেছে, কিন্তু কেউ কাউকে আক্রমণ করছে না। সুন্দরবনের অবস্থান করা বনকর্মী, জেলে-বাওয়ালি, মৌয়াল ছাড়াও মিঠা পুকুরের পানি পান করে বাঘ-হরিণসহ বন্য প্রাণীরা।। পুকুরে নোনা পানি ঢুকে পড়ায় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হবে কি না, সে বিষয়ে জনতে চাইলে (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এবার পানিতে লবণাক্ততা খুব বেশি নেই। ফলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না বলেই মনে করি। দুর্যোগের সময় শুধু মানুষ নয় বন্য প্রাণীরাও অসহায়।
‘প্রতিটি ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। তবে আমাদের কে রক্ষা করলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয় সুন্দরবন।
অন্যদিকে ইয়াসে সুন্দরবনে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণে চারটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বনের দুর্গম এলাকায় সবার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে এ তথ্যগুলো পাওয়া গেছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ধারণে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত বন বিভাগের চারটি রেঞ্জ এলাকা। যার দু’টি বাগেরহাটে অবস্থিত। এরই মধ্যে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের অন্তর্গত শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছেন কমিটির কর্মকর্তারা।