এইচ এম জুয়েল:-(২৫জুলাই) রোববার বিকেলে স্বরূপকাঠি আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। সাথে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুরের DC আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, নেছারাবাদের UNO মোশারফ হোসেন, পৌর মেয়র গোলাম কবির, এসিল্যান্ড বশির গাজী, স্থানীয় চেয়ারমান মিঠুন সহ সাংবাদিক বৃন্দ।
স্থানীয় চাষীদের সাথে কমিশনারের খোশগল্প।
দমকাঠির ফ্লটিং পেয়ারা পার্কে পেয়ারা চাষীদের সমস্যার কথা শুনেন। এবং চাষীদের মানউন্ননে যত প্রকার সংকট আছে তা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। এসময় তার সাথে একান্ত আলাপে চাষীরা জানান, কুড়িয়ানা কেবল পেয়ারাই নয় এখানে আমড়া, লেবুসহ বছর ভরে নানা প্রকারের সবজির আবাদ হয় । কিন্তু বেচা কেনা করার জন্য তেমন কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। খালে নৌকার উপর ভাসমান হাট বসিয়ে ঝড় বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে বেচা কেনা করতে হয়। কাঁচা মাল কেনা বেচার জন্য টেকসই পাকা শেড নির্মান করা দরকার। এখানে আসার রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক, শহর থেকে সড়কপথে বিভিন্ন পাইকার সহ পর্যটকদের আসা-যাওয়ায় বেগ পেতে হয়। তাই আমাদের মালের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
বহিরা পাইকাররা হাট থেকে পেয়ারা কিনছেন।
পেয়ারা মৌসুমী প্রতিবছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। তাদের আশ্রয় বা বিশ্রাম নেওয়ার মত কোন ব্যবস্থা নেই। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি অনেক বিদেশী পর্যটক এখানে আসেন। তাদের থাকার খাওয়ার জন্য সরকারিভাবে হোটেল-মোটেল তৈরি করার জন্য কমিশনারের কাছে আবেদন করেন।
এদিকে ওখানকার পেয়ারা চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকায় পেয়ারা জেলি কারখানা ও কোল্ড স্টোর তৈরি হলে উৎপাদিত পেয়ারা পরিবহনের অভাবে নষ্ট হবে না এবং সংরক্ষণ করে অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী হবে।
পর্যটকের সাক্ষাৎ নিচ্ছেন মোহনা টিভির সাংবাদিক
বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর এই তিন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বেশ কিছু গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে চোখ জুড়ানো পেয়ারা বাগান। প্রায় দুই হাজারাধিক পেয়ারা চাষীরা মাইলের পর মাইল হাজার হেক্টার জুড়ে পেয়ারার বাগান গড়ে উঠছে। এখানের সিংহভাগ বাসিন্দার আয়ের একমাত্র উৎস এই পেয়ার বাগান। যা বাংলার আপেল বলে খ্যাত। চাষিরা গাছ থেকে বিক্রির জন্য পেয়ারা তুলছে।
পেয়ারার মৌসুমে এই জনপদের ব্যস্ততা চোখে পড়ারমত। চাষিদের জীবন যাপন বেঁচে থাকার অবলম্বন এই বাগান তেমনি সৌন্দর্য পিপাসু চোখের মন জুড়ানো রুপ নিয়ে এখানে প্রকৃতি সাজিয়েছে নিজেকে। পেয়ারা বাগানে পর্যটক
বাগানের চারিদিকে জালের মতো বিছিয়ে থাকা ছোট ছোট খাল আর সবুজের মায়া। শুধু পেয়ারার ভালো ফলনের জন্যই নয়, সারা দেশে এখন পেয়ারা বাগান দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছে, দেশিও পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশিদের পর্যটকদের আগামন ঘটছে।
নদীতে ভাসমান হাটে পেয়ারা বেচাকেনা।
দূর দূরান্ত এলাকা থেকে পাইকার আসে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও পৌঁছে যায় । এখানে পেয়ারার ফলন ভালো ও সুস্বাদু এবং ছিটারোগ না হওয়ায়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকা আয় করছেন পেয়ারা চাষীরা। তবে করোনার প্রভাব পড়েছে পেয়ারা পল্লীতে থেমে থেমে লকডাউন হওয়ার কারণে গতবছরের মত এ বছরও পেয়ারার ভালো দাম পায়নি মাত্র ২০০ টাকা দরে মন বিক্রি করছে। এতে চাষ খরচা ও মজুরি পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
পেয়ারা বাগানের প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, দুইশ’ বছর আগে আন্দাকুল গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মন্ডল নামের একজন ভারতের কাশীতে গিয়েছিলেন তীর্থে। সেখান থেকে ফেরার সময় পেয়ারার বীজ নিয়ে আসেন। সেই বীজ থেকে গাছ উৎপন্ন হয়েছে এবং ঐ গাছে উৎপাদিত পেয়ারা দিয়েই শুরু হয় পেয়ারা বাগানের যাত্রা। এরপরই আস্তে আস্তে এলাকা জুড়ে শরু করে পেয়ারা চাষ।
তবে ব্যাপক হারে পেয়ারা চাষ শুরু হয় ১৯৪০ সাল থেকে। আস্তে আস্তে নেছারাবাদের সংগীতকাঠি, খায়েরকাঠি, ভদ্রানন্দ, বাস্তুকাঠি, ভাঙ্গুরা, আদাবাড়ী, বাহ্মণকাঠি, ধলাহার, জিন্দাকাঠি, আটঘর, কুড়িয়ানা, ইদলকাঠি, মাদ্রা, বেঙ্গুলি, আদমকাঠি, অশ্বত্থকাঠি, সেহাংগল ও আন্দারকুলসহ ২৬ গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠে পেয়ারা বাগান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পেয়ারা বাগানে ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। এই অঞ্চলটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বারবার আক্রমন চালাতো। বাগানের ভেতর মুক্তিযোদ্ধা, মানিক বাহিনী ও সিরাজ সিকদার বাহিনী অন্যতম। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ঐতিহাসিক চরিত্র সিরাজ সিকদারের সবচেয়ে বড় ঘাটি ছিলো এখানে। সিরাজ স্বতন্ত্র ভাবেই গড়ে তোলেন মুক্তি বাহিনী। বাগানের ভিতরে গড়ে তুলেছিলেন ক্যাম্প।