এইচ এম জুয়েল:- রাজধানীর অভিজাত পাড়ায় মাদকের হাট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে মাদক ও অনৈতিক কাজের রমরমা ব্যাবসা। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় নাইট ক্লাব গুলতে কথিত মডেলদের দিয়ে একশ্রেণীর প্রভাবশালী মাদক চক্র হাউজি বা ডিজে পার্টির নামে মদ, ইয়াবা ও ড্যান্স পার্টির আয়োজন করে এবং উড়তি রমণীদের দিয়ে উদাম নৃত্যের আসর বসিয়ে খদ্দেরদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো।
এক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার অভিজাত এলাকায় অর্ধশতাধিক ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। এসব ডিজে পার্টিতে ধনী পরিবারের সন্তানদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে ক্ষতিকর মাদকে আসক্ত করিয়ে এবং (ব্ল্যাকমেইল) প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়ের নেশায় কতিপয় মডেল-নায়িকা এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের ক্লাইন্ট কালেকশনের জন্য একাধিক সুইট গ্ল্যামার গার্ল রিপেজেনটিভ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত, অবাধে পতিতা ও মাদক পণ্য খদ্দেররা ভোগ করতে পারে বিধায় এই পণ্যের ডিমান্ড বেশি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরো তৎপর হয়ে ওদের দুর্গ ভেঙে দিলে এই অবৈধ রমরমা ব্যবসা হয়তো বন্ধ হতে পারে।
উল্লেখ্য, মাদক ব্যবহার ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয় আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, চিত্রনায়িকা পরীমণি, নজরুল রাজ, মিশু, জিসান, জিমি এবং ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর আলোচিত পাপিয়াসহ একাদিক কথিত মডেল পর্নোগ্রফি ব্যবসায়ী কে । এদের প্রত্যেকের বাসায়ও রয়েছে মিনিবার। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, সিসা, এলএসডি, ইয়াবা, আইসসহ পর্নোগ্রফি ছবি তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী। কোটিপতি ব্যক্তিদের টার্গেট করে পার্টির নামে বিত্তবানদের নিজ বাসায় ডেকে এনে নেশাগ্রস্থ মাদক ও উদম ড্যান্স পার্টির ব্যবস্থা করতো। এরপর তারা আপত্তিকর অবস্থার ছবি তুলে রাখত। সেগুলো তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেলিং করার আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি গোয়েন্দারা খুঁজে পায়।
গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, পিয়াসার নেটওয়ার্কে ২০-২৫ জন সুন্দরী রমণী রয়েছে। পালাক্রমে তাদের মাধ্যমেই বসানো হয় মাদকের জমজমাট আসর। সেই আসরে আমন্ত্রণ জানানো হতো গুলশান, বনানী, বারিধারায় বসবাসকারী হাই-প্রোফাইল ব্যবসায়ীদের।
নায়িকা পরীমণির সঙ্গী তুহিন সিদ্দিকী অমি বনানী ও উত্তরায় পার্টি হাউসের নিয়ন্ত্রক। হাউস পার্টির আয়োজকরা বিদেশে ‘প্লেজার ট্রিপের’ নামে অনেক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করে টাকা আদায় করতো। চট্টগ্রামের মেয়ে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও তাদের সন্তানদের এনে তিন ধরনের ফায়দা হাসিল করত তারা আসরে আমন্ত্রিতদের বুঁদ করতে যে মাদক ব্যবহার করা হতো তার বিল পেত পিয়াসা। এ ছাড়া রমণীরা উদাম নৃত্যের সময় তাদের ওপর যে টাকা ছিটানো হতো তার বড় অংশও পিয়াসা নিত। আর গোপন ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করত। এ ছাড়া রমণীদের সঙ্গে রাত কাটানো অতিথিদের পরদিন গুলশানের একটি ডায়মন্ড জুয়েলারি শপ থেকে লাখ লাখ টাকার জুয়েলারি উপহার দিতে বাধ্য করতো।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয়েছে দাবি করে সমিতির সদস্য নায়িকা পরীমণি পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে শিল্পী সমিতি।
এদিকে প্রশাসনিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, মাদকের পার্টির ও প্রতারণার পেছনে যারা আছেন তারা প্রভাবশালী হলেও আইনের আওতায় আনা হবে।